ইলেকট্রনের আকার কতখানি? What is the size of the electron?

 ইলেকট্রনের আকার কতখানি?

ইলেকট্রন আবিষ্কার ১৮৯৯ সালে। ব্রিটিশ বিজ্ঞানী স্যার জে জে টমসন এর হদিস পান। কিন্তু তখনো পরমাণু ধারণার প্রমাণ পাননি বিজ্ঞানীরা। তার আগেই পরমাণুর ভেতরকার একটা কণা আবিষ্কার করে ফেললেন টমসন। কিন্তু সেই ক্ষুদে কণাটির আকার কেমন?

  • কেমন আবার, ক্রিকেট বলের মতো গোল! অর্থাৎ গোলকের মতো।
  • সেটা দেখল কে?
  • কেউ দেখেনি, অনুমান করতে তো দোষ নেই! তা নেই, তবু কেন গোলাগাল ধারণা করা হলো পরামাণূর?
  • গোলই তখন সর্বেসর্বা। পৃথিবী গোল, চাঁদ-তারা, সূর্য গোল। প্রকৃতি গোলাকার জিনিস পছন্দ করে। অর্থাৎ খুদে কণারাও গোল।
  • কিন্তু কেন প্রকৃতি গোল জিনিস পছন্দ করে?
ইলেকট্রনের আকার কতখানি?
পদার্থবিজ্ঞানীদের কাছে তখন হাতিয়ার ছিল। সেটা নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র। নিউটন মশায় বলেছিলেন, মহাকর্ষ হলো আকর্ষণ বল, যার দুটি বস্তুর ভর আর তাদের মধ্যবর্তী দূরত্বের ওপর। অর্থাৎ এই বলের কারণেই বস্তুগুলো পরস্পরে সবেচেয়ে কাছাকাছি থাকতে চায়। সোজা কথায় বাধা না পেলে বস্তুগুলো নিজেদের মধ্যে সর্বনিম্ন দূরত্ব নিশ্চিত করবে৷ ধরাযাক, কোথাও অবারিত শূন্যস্থান। চরাচর জুড়ে আর কোনো বস্তু নেই, বাধাও নেই। দুটি বিশালাকারের বস্তু রাখা হলো পরস্পর থেকে অনেক দূরে। তখন বস্তু দুটি পরস্পরকে আকর্ষণ করবে। যত দূরেই হোক। কারণ, মহাকর্ষ বল নিজে খুব দুর্বল হলেও এর সীমা অসীম। তাই বড় বস্তু দুটো পারস্পারিক টানে কাছে আসতে শুরু। এক সময় কমবে দূরত্ব, তত শক্তিশালী আকর্ষণের মান। এক সময় এরা পরস্পরের খুব চলে আসবে, ধাক্কা খাবে। সংঘর্ষ হয়ে দুটোর মধ্যে, পরস্পরের সঙ্গে মিশে যাবে। অর্থাৎ নিউটনীয় মহাকর্ষীয় টানের ধর্মই হলো দুটো বস্তুকে সবচেয়ে নিকটবর্তী রাখতে চাওয়া। এখন যদি দুটো না হয়ে অসংখ্য বস্তু কাছাকাছি থাকে, সবাই সবাইকে তার কেন্দ্রের দিকে টানবে। সবগুলো জড়ো হয়ে একটা পিণ্ডের মতো অবস্থা হবে। সেই পিণ্ডের আকার হবে গোলকের মতো। দুটো বস্তু না হয়ে যদি সবগুলো খুদে পরমাণুর ঝাঁক হয়, সেগুলোর পরিমাণ যদি ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন,.... হয়, তাহলে সবাই সবাইকে আকর্ষণ করবে, জড়ো হবে একজায়গায়। চারকোণা বা এবড়ো-খেবড়ো হলে মাঝখানে থাকা পরমাণুর সঙ্গে সব পরমাণুর দূরত্বের সামঞ্জস্যটা থাকে না। তারচেয়ে একটাকে কেন্দ্র করে তার চাপাশে অন্য পরমাণুরদের একটা স্তর তৈরি হবে। এটাকে যদি প্রথম স্তর বলি, তাহলে কেন্দ্রের পরমাণুটি থেকে প্রথম স্তরের সবকটি পরমাণুর দূরত্ব সমান হবে। এরপর পরে প্রথম স্তরের চারপাশে আরেকটা স্তর তৈরি হবে। দ্বিতীয় স্তরটি প্রথম স্তরে চেয়ে বেশ দূরে হবে। তবে কেন্দ্রীয় পরমাণুর সঙ্গে দ্বিতীয়স্তরের সবগুলো পরমাণুর দূরত্ব সমান। অর্থাৎ গোলককার হলেই কেবল বস্তুগুলোর সর্বনিম্ন দূরত্বে থাকার ব্যাপারটা নিশ্চিত হয়। প্রকৃতির জন্য সেটাই সুবিধার। অন্যদিকে চারকোনো, ঘনাকার, ডাম্বেলাকার ইত্যাদি অন্যকোনো আকার হলে সর্বনিম্ন দূরত্বের ব্যাপারটার সামঞ্জস্য থাকে না। এজন্য আমরা মহাকাশের বস্তুগুলোকে গোলাকার দেখি।

একটা প্রশ্ন এখন হতেই পারে, নিউটনের তত্ত্বমতে মহাকর্ষ বলকে যেমন আকর্ষণ বল হিসেবে দেখানো হয়, আইনস্টাইনের জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটি অনুসারে মহাকর্ষ তো আকর্ষণ বল নয়। স্থানকালের সংকোচনের ফলে এমনটা হয়। কথাটা ঠিক, দুয়েকটা এদিক ওদিক ছড়া, আপেক্ষিকতার কারণে নিউটনের তত্ত্ব বাতিল হয়ে যায় না। আপেক্ষিতাও একই কথা বলে, কোনো বস্তু স্থানকালের যেখানে অবস্থান করে, তার চারপাশের স্থনকালকে সেটা বাঁকিয়ে দেয়। অন্যকোনো বস্তু সেই বাঁকা স্থানকালের ভেতরে এসে পড়লে তারা পরস্পরের খুব কাছাকাছি চলে আসে। বাইরে থেকে তখন দেখলে মনে পস্পরকে আকর্ষণ করছে। আইনস্টাইনের তত্ত্ব অনুসারে এটাই হলো মহাকর্ষ। এভাবেও যদি হিসাব করা হয়, তাহলে মহশূন্যে অসংখ্য বস্তু যখন কাছাকাছি থাকে, তাদের চারপাশের স্থানকাল এমনভাবে বেঁকে যাবে, তার ফলে এরা পরস্পরের সর্বনিম্ন দূরত্বে থাকতে চাইবে।

অণুদের আকার গোলকের মতো। কিন্তু সব যোৗগের অণুর আকার আবার গোলাকার নয়। অণুর আকার কেমন হবে, সেটা নির্ধারণ করে তার রাসায়নিক ধর্মের ওপর। কয়টা মৌলের অণুর কীভাবে সমাবেশ হচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করে অণুর আকার কেমন হবে। গোলাকার, পিরামিড আকৃতি, শিকলের মতো কিংবা ষড়ভূজাকারও হতে পারে। কিন্তু এস অণুই আবার যখন তরল পদার্থে রূপ নেবে, তখন সারফেস টেনশন বা পৃষ্ঠটানের ব্যাপরটা চলে আসে, তখন আবার সেই পুরোনো সজ্জায় ফিরে যাবে। অর্থাৎ সারফেস টেনশনের কারণে পরমাণুগুলো সর্বনিম্ন দূরত্বে পাশাপাশি থাকতে চাইবে, এ কারণে পানি বা তরলের ফোঁটাগুলো গোলাকার।

  • বস্তুর গোলাকার হওয়ার কারণ তো দেখলাম। কিন্তু মৌলিক কণাদের আকার কি গোলাকার হবে?

পরমাণুর ক্ষেত্রে সেটা বলাই যায়। পরমাণুর কেন্দ্রে থাকে নিউক্লিয়াস। নিউক্লিয়াসের ভেতরে থাকে চার্জযুক্ত প্রোটন এবং চার্জ নিরপেক্ষ নিউক্লিয়াস। প্রোটন আর নিউট্রনগুলো পরস্পরের সঙ্গে নিউক্লিয়ার বল দ্বারা যুক্ত। এই বল বিদ্যুৎচুম্বকীয় বলের চেয়ে বহুগুণ শক্তিশালী। মহাকর্ষের মতো এরও শুধুই আকর্ষণী চরিত্র আছে। অন্যদিকে বিদ্যুৎচুম্বকীয় বলের আকর্ষণ ও বিকর্ষণ দু ধরনের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। একই চার্জের একাধিক কণাদের মধ্যে এই বল বিকার্ষী বল হিসেবে কাজ করে। তাই নিউক্লিয়াসের ভেতরে থাকা প্রোটনগুলো পরস্পরকে বিকর্ষণ করার কথা। তাই যদি হত, তাহলে নিউক্লিয়াসের ভেতর পিণ্ডের মতো একসঙ্গে বাস করা এদের জন্য অসম্ভব হত। কিন্তু বিদ্যুৎচুম্বকীয় বলের বিকর্ষণ ক্ষমতাকে হারিয়ে দেয় সবল নিউক্লীয় বলের অতি শক্তিশালী আকর্ষণ ক্ষমতা। ফলে প্রোটন আর নিউট্রনগুলো নিউক্লিয়াসের ভেতর একটা গোলাকার পিণ্ডের মতো অবস্থান করে। নিউক্লিয়াসের চারপাশে শক্তিস্তরগুলো একইসঙ্গে তরঙ্গ আর কণার মতো করে অবস্থান করে। অর্থাৎ সুপারপজিশনে থাকে ইলেকট্রনগুলো, তাই নির্দিষ্ট কোনো বিন্দুতে নয়, পুরো শক্তিস্তর জুড়েই ওদের অবস্থান। তবু্ও ইলেকট্রনের ওপর বিদ্যুৎচুম্বকীয় আকর্ষণ বল কাজ করে। নিউক্লিয়াসের ভেতর ধনাত্মক চার্জের প্রোটন ঋণাত্মক চার্জের ইলেকট্রনগুলোকে আকষণ করে নিজেদের দিকে। অর্থাৎ ইলেকট্রনগুলো নিউক্লিয়াসের দিক থেকে একটা আকর্ষণ বল অুনভব করে। তাই সবমিলিয়ে বলা যায়, ইলেকট্রনের শক্তিস্তরগুলোর আকার উপবৃত্তকারই হোক আর ডাম্বেলাকৃতিরই হোক, সব মিলিয়ে একটা পরমাণুর আকার গোলাকার। টেনিস বলের মতো।
  • তাহলে, প্রোটন আর নিউট্রনের আকার কেমন?
প্রোটন-নিউট্রন মৌলিক কণা নয়। একটা প্রোটন তৈরি হয় দুটি আপ কোয়ার্ক এবং একটি ডাউন কোয়ার্ক দিয়ে। আবার একটা নিউট্রন তৈরি হয় দুটি ডাউনকোয়ার্ক আর একটি আপ কোয়ার্ক দিয়ে। সবল নিউক্লীয় বলের সাহায্যে এসব কণাগুলো প্রোটন আর নিউট্রেনর মধ্যে আবদ্ধ থাকে। কিন্তু তিনটা কণা খুব কাছাকাছি থাকলেও সেগুলো দিয়ে গোলাকার কোনো বস্তু তৈরি করা সম্ভব নয়, সেটা পিরামিডের মতো হবে। কেন? তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম, কোয়ার্কগুলোর আকার গোলাকার, মার্বেলের মতো। তিনটি মারর্বেল রাখুন কাছাকাছি। সেটার আকার কী গোলাকার হচ্ছে? হচ্ছে না। তাই প্রোটন আর নিউট্রনের আকার গোলাকার ধরে নিলে ভুল হবে। যদিও ক্ল্যাসিক্যাল জগৎ আর কোয়ান্টাম জগৎ এক নয়। তাই কোয়ান্টাম জগতে কোনো বস্তুর চেহারা ক্ল্যাসিক্যাল জগতের মতো গোলাকার, আয়তকার—এ ধরনের আকার ধরতে গেলে নিশ্চিতভাবেই ভুল হবে। তবু আমরা আরেকটু চেষ্টা করব। ইলেকট্রনের আকার কেমন, সেটা আমাদের ক্ল্যাসিক্যাল অনুভূতি দিয়েই বোঝার চেষ্টা করব।
  • ইলেকট্রনের আকার কেমন? সেটা কি গোলাকার?
ইলেকট্রনের আকার কেমন সে ব্যাখ্যায় যাওয়ার আগে আমরা আরেকবার ক্ল্যাসিক্যাল জগতে ঢুঁ মেরে আসি। ইলেকট্রন আবিষ্কার করেন জে জে টমসন, ১৮৯৯ সালে, সে কথা আগেই বলেছি। তখন কোয়ান্টাম তত্ত্বই আবিষ্কার হয়নি। এর এক বছর পরে জার্মান বিজ্ঞানী ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক কোয়ান্টাম তত্ত্ব হাজির করেন।

টমসন ইলেকট্রন আবিষ্কার করেন কাথোড টিউব থেকে। কীভাবে আবিষ্কার হয়, সেটারে বিস্তারিত পাবেন অন্বেষা থেকে প্রকাশিত আমার লেখা বই কোয়ান্টাম ফিজিকস-এ। টমসন ইলেকট্রন আবিষ্কারে পর, এ কণা নিয়ে আরও কিছু পর্যবেক্ষণ করেন। চুম্বক্ষেত্রের ভেতর দিয়ে ইলেকট্রন প্রবাহিত করেন। সেখান থেকে এর কিছু বৈশিষ্ট্য বেরিয়ে আসে। তিনি নিশ্চত হন, এই কণা ঋণাত্মক চার্জ বহন করে। শুধু তাই নয়, এর ভর আর চার্জের অনুপাত m/q বের করতে সক্ষম হন। সেখান থেকেই বেরিয়ে আসে ইলেকট্রনের ভর আর চার্জের পরিমাণ। টমসন হিসাব করে দেখেন, এই কণার ভর হাইড্রোজেন আয়নের ভরের প্রায় ১৮০০ ভাগের এক ভাগ, অথচ এর চার্জের পরিমাণ হাইড্রোজেন আয়নের চার্জের সমান। চার্জ সমান হলেও চার্জের প্রকৃতি হাইড্রোজেন আয়নের ঠিক উল্টো। হাইড্রোজেন আয়ন ধনাত্মক চার্জের আর ইলেকট্রনের চার্জের প্রকৃতিরর ঋণাত্মক।

এখানে একটা কথা বলে রাখা জরুরি। হাইড্রোজেন আয়ন আর হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াসের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। কারণ এর নিউক্লিয়াসে একটা মাত্র ধণাত্মক কণা থাকে। সেই কণাটার যে প্রোটন এটা বহুদিন পরে আবিষ্কার করেন আর্নেস্ট রাদারফোর্ড। সুতরাং হাইড্রোজেন আয়ন কিংব হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াস আসলে একটা প্রোটন।

কোয়ান্টাম বলবিদ্যা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর একে একে আবিষ্কৃত হতে শুরু করল মৌলিক কণাগুলো, পরবর্তী পাঁচ-ছয় দশকে পাওয়া গেল কোয়ার্ক, টাউ কণা, নিউট্রিনো ইত্যাদি মৌলিক কণাগুলি। এছাড়া ভারী কণা হ্যাড্রনদেরও দেখা মিলল কাতারে কাতারে। পাওয়া গেল বলবাহী মৌলিক কণা গ্লুয়ন, ডাব্লুউ ও জেড কণাদের। বহু আগেই পাওয়া গিয়েছিল সবচেয়ে পরিচিত বলবাহী কণা ফোটনকে।

কোয়ান্টাম বলবিদ্যা মূল কণিদারে একটা সংজ্ঞা আছে। এদেরকে বলা হয় পয়েন্ট লাইক কণা বা বিন্দু কণা। বিন্দু কণা মানে হলো এরা বিন্দুর মতো। এদের আয়তন শূন্য। দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-উচ্চতা—কিছুই নেই। ভর আছে, চার্জ আছে, স্পিন আছে। কোনো কোনো কণার ভর ও চার্জও নেই। আছে শুধু স্পিন। যেমন আলোর কণা ফোটন এবং বলবাহী কণা গ্লুয়নের কোনো ভর নেই।

মোদ্দা কথা হলো, বিন্দু কণাদের কোনো দৈর্ঘ, প্রস্থ বা উচ্চতা নেই, তাই এদেরকে গোলাকার হিসেবে কল্পনা করাটাই ভুল। গোলাকার হতে হলে, ব্যস থাকতে হবে, পরিধি থাকতে হবে, কেন্দ্র থাকতে হবে—সে সবের কিছুই নেই বিন্দু কণাদের। তাই ইলেকট্রনের আকার কল্পনা করতে যাওয়াটাই বোকামি।

আসলে ইলেকট্রন কোয়ান্টাম কণা। আর কোয়ান্টাম জগতে আমাদের সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান প্রতারিত হয়। তাই সেখানে ঢুঁ মেরে ইলেকট্রন বা কোয়ার্কের আকার গোল না চারকোনা সেটা দেখতে চাওয়াটাই বোকামী। ইলেকট্রন বিন্দু কণা—তাই, আকারহীন, তাই একই বিন্দুতে একাধিক কণা রাখা সম্ভব। তবে সেক্ষেত্রে ইলেকট্রনগুলোর স্পিন আলাদা হতে হবে। বোস-আইনস্টাইন কন্ডেনসেটে এই কাজটিই করা হয়।

ইলেকট্রনেরা কণা ও তরঙ্গের সুপার পজিশনে থাকে। তরঙ্গ ধর্মের কোনো আকার হয় না। কিন্তু কণা ধর্মের আকার থাকতেই পারে। কিন্তু কোয়ন্টাম বলবিদ্যা ইলেকট্রন কোয়ার্কের মতো বিন্দু কণাদের আকার কল্পনা করতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তবে কোয়ান্টাম বলবিদ্যাই তো শেষ কথা নয়। বড়দের জগতে কোয়ান্টাম বলবিদ্যা আজও অচল। মহাকর্ষ বলের ব্যাখ্যা আজও দিতে পারে না কোয়ান্টাম মেকানিকস। তাই এমন একটা তত্ত্ব খোঁজা হচ্ছে, যা একই সঙ্গে মহাকর্ষ বলের ব্যাখ্যা দিতে পারবে, বড়দের জগতেও প্রতিটা নিয়ম-কানুন ব্যাখ্যা করতে পারবে, আবার কোয়ান্টাম জগতেও সফল হবে। এ ধরনের একটা তত্ত্বকে বলা হচ্ছে থিওরি অব এভরিথিং। অনেকগুলো তত্ত্বের জন্ম হয়েছে গত পাঁচ দশকে, যেগুলো নাকি সবকিছু একসঙ্গে ব্যাখ্যা করতে পারে। এগুলোর বেশিরভাগই ব্যর্থ হয়েছে। তবে স্ট্রিং থিওরি নামের তুমুল জনপ্রিয় তত্ত্বটি এখন পর্যন্ত এ দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছে।

মূল কণাগুলো কী দিয়ে তৈরি? এ প্রশ্নটাই ছিল না কোয়ান্টাম তত্ত্বে। কিন্তু বিজ্ঞান কখনো প্রশ্ন করতে নিষেধ করে না—সে প্রশ্নের উত্তর বিজ্ঞানে থাক আর না থাক। কোয়ান্টাম বলবিদ্যা জবাব দিতে না পারলেও স্ট্রিং থিওরি চেষ্টা করেছে উত্তর দিতে। চেষ্টা করেছে, মূল কণিকাগুলো কী দিয়ে তৈরি, সেগুলোর ব্যাখ্যা দিতেও।

স্ট্রিং থিওরি মতে, মহাবিশ্বের সমস্ত কণা এক মাত্রিক স্ট্রিং তা সূতা দিয়ে তৈরি। এই সূতাগুলো বিভিন্ন মাত্রায় কম্পনের ফলে, সেগুলো কণার রূপ ধারণ। ব্যাপারটা বুঝতে হলে একটা ছোট্ট তামার বা স্টিলের তার নিতে পারেন। তারপর তারের দুমাথা জোড়া দিয়ে একটা রিং তৈরি করুন। তারপর রিংটা ঘুরিয়ে মেঝের ওপর ছেড়ে দিন। দেখবেন সেটা একটা গোলাকার বলের মতো আকার নিয়েছে। এমনটা ভাবতে পারেন স্ট্রিংয়ের কম্পনকে। তবে স্ট্রিংয়ের কম্পনের বিভিন্ন মোড আছে। স্ট্রিংয়ের আকারও বিভিন্ন রকম। কোনোটা সোজা, কোনোটা বাঁকানো। কোনোটা সোজা। এদের বিভিন্ন মোডের কম্পনটাও আমাদের ক্ল্যাসিক্যাল মস্তিষ্ক দিয়ে বোঝা মুশকিল। এগুলো উচ্চতর গাণিতিক হিসেবের ফল। যাইহোক, স্ট্রিং থিওরি কণাদের শূন্যমাত্রার বিন্দু কণাদের তত্ত্বটা খারিজ করে দেয়। কেন?
  • কারণ কণাগুলো যে স্ট্রিং বা তন্তু দিয়ে তৈরি, সেগুলো শূন্যমাত্রার নয়—একমাত্রিক। এদের নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য আছে।
কোনো কিছু ছোট হতে হতে কতটা ছোট হতে পারে? যেমন সময়ের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম অংশটা কতটুকু? দৈর্ঘ্যের ক্ষুদ্রতম একক কোনটা? এ দুইয়েরই সবচেয়ে ছোট ভাগটার নাম দেওয়া হয়ে কোয়ান্টাম তত্ত্বের জনক ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের নাম অনুসারে। যেমন সময়ের ক্ষুদ্রতম একক প্ল্যাঙ্ক টাইম। 5.39× 10^-44 সেকেন্ড। অন্যদিকে প্ল্যাঙ্ক দৈর্ঘ্যের মান 1.62 × 10^-35 মিটার। খুব ছোট দৈর্ঘ্য। কিন্তু এর মান একেবারে শূন্য নয়। এত ছোট একটা সূতার ঘূর্ণনে যে কণার আকার নেবে, সেটাও ছোট হতে পা­­­রে কিন্তু শূন্য হবে না।

Mujahid

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thanks for connect with us ❣️

নবীনতর পূর্বতন